Sunday, July 3, 2011

তিতাস আজও কথা কয়

 তিতাস আজও কথা কয় গৌতমকুমার দাস

সুবলা বাসন্তী কিশোরের মালো জীবনের গাথা ভরা তিতাস আজও বয়, বয়ে যায়। চোখে পড়ে তিতাসের জলে স্নান করছে মা ও ছেলে, ঠিক যেন অনন্তের মা, আর দামাল শিশু অনন্ত উদোম গায়ে মায়ের সাথে দস্যিপনা করেই চলেছে। অথবা দেখা যায় অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘‘তিতাস একটি নদীর নাম’’ এর বাসন্তী যেন নদী পাড় থেকে দুপুর শেষে বাসন কাঁখে বাড়িমুখো হয় আজও। তিতাস বিখ‌্যাত হওয়ার পরে অর্ধশতক কেটে গেলেও দারিদ্র্যের চিহ্ন মুছে যায়নি এঁদের। তবে তিতাস বদলেছে। বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাসের বুকে পাল তোলা নৌকার সাথে সঙ্গী হয়েছে দ্রুত জলযান ভটভটিও। গাছগুলো ঝুঁকে পড়েছে নদীর দিকে। কচুরিপানা ইতস্তত ভেসে রয়েছে। তিতাসে কোনো স্রোত নেই। ছোট্ট ডিঙিতে তাই স্থির হয়ে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরে চলেছে দুইজন সওয়ারি। মালো কিনা কে জানে! একমনে তাকিয়ে রয়েছে ছিপের ফাতনার দিকে।

আকারে আয়তনে তিতাস পাড়ের ছোটখাটো ব্রাহ্মণবাড়িয়া এখন বাংলাদেশের আস্ত এক জেলা। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার অন্যতম। ঢাকা থেকে দূরত্ব মাত্র ৬৫ কিমি। এই জেলা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সংলগ্ন। রাত কাটানোর জন্য এখানে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। আর আছে সরকারী ডাকবাংলো। তিতাসের তীরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঞ্জ হিসাবে বেড়ে ওঠা। সপ্তদশ শতকে পুজো পাঠ করার ব্রাহ্মণের অভাব হওয়ায় এই এলাকায় ব্রাহ্মণের আগমন হেতু তিতাস পাড়ের এই অংশের নাম হয় ব্রাহ্মণাড়িয়া।

ঢাকা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার পথের গন্তব্য দক্ষিণ পূর্বের তিতাস আরও সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে সম্প্রতিকালে খ্যাত, আর তা হলো তিতাসের বুক ফুঁড়ে যেখানে সেখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের উদ্গীরণ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই তীরে প্রায় ১৯ কিমি জুড়ে এই গ্যাস ক্ষেত্রের অবস্থান। গ্যাস বেরোনো শুরু হয় ১৯৬২ সালে। এখনও বেরোয় এবং নদীবক্ষে জ্বলে, জ্বলেই যায়। তিতাস গ্যাস ক্ষেত্র সারা বাংলাদেশের মোট গ্যাসের চাহিদার শতকরা ২০ ভাগ জোগান দিয়ে চলেছে পঞ্চাশ বছর ধরে।

তিতাস পাড়ের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সুদীর্ঘ দিন ধরে সাহিত্য শিল্পকলা ও সঙ্গীতের পীঠস্থান। অপরূপ নিসর্গ শোভিত তিতাসের দুই পাড়ের উর্বর মাটি সুফলা শস্য শ্যামলা। তিতাস এখানে প্রকৃতির আদরের দুলাল। মেঘনার সন্তান।

ইচ্ছে হলে ঢাকা থেকে এসে তিতাসকে দেখে দিনের দিন ফিরে যাওয়া যায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অদূরে গোকর্ণ ঘাটে তিতাস একটু বেশি কর্মব্যস্ত। এবং প্রাকৃতিক। এখানে বট, শিরিষ নুয়ে পড়েছে তিতাসের বুকে। পাড়ের ইটভাটার চিমনি থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে অনবরত। দূর থেকে দেখা যায় গির্জার গম্বুজ। পাড়ে শিবমন্দির এখনও। পুজো হয় নিয়মিত। আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কিছু পুবে সরাইলের কাছে তিতাস বড্ড ক্ষীণকায়া। তিতাসের চর বেদখল হয়ে চলছে ধান ও সরষের চাষ। পাশ দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে পিচ রাস্তা। তার ওপর দিয়ে এ যুগের সুবলা কিশোররা বাইক চালাচ্ছে তীব্রগতিতে। পেছনে অন্তরঙ্গভাবে বসে একালের বাসন্তীরা। কানে ধরা মোবাইল ফোন। তিতাসের নদীচরে কোথাও আবার ফাঁকা জায়গাটুকুকে ছোটরা বানিয়ে ফেলেছে ক্রিকেট মাঠ। সেখানে ব্যাট বল খেলছে আজকের অনন্তরা।

তিতাসের বুকে মালোরা এখনও মাছ ধরে কিনা জানা নেই, তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাবার হোটেলে বাইল্যা, সরপুঁটি ও নল মাছ দিয়ে দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজন সারার সময় হোটেলের ম্যানেজারের থেকে জানা গেল এ সব মাছ তিতাসের জল থেকে ধরা।

তিতাস বাস সার্ভিসে অথবা ট্রেনে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসার পথে তিন তিনটি বড় নদী পেরোতে হয়। প্রথমে শীতলক্ষ্যা, পরে ভৈরব এবং শেষে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র। এই তিন নদী আকারে তিতাসের থেকে অনেক অনেক বড়। তিতাসের গতিপথ ইংরাজী ‘বি’ অক্ষরের মতো কিছুটা। মেঘনা থেকে বেরিয়ে আবার মেঘনাতে তার মিলন। মেঘনা মায়ের সন্তান তিতাস। আর তার বিস্তৃতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জুড়ে। সদা চঞ্চল তিতাসের বুক জুড়ে কর্মব্যস্ত মাঝি মাল্লা মা শিশু, নৌকায় যাত্রীদের দেখলে মনেহয় অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস আজও যেন কথা কয়। তবু ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এর সুবলা বাসন্তী অনন্তের মায়েদের কথা মনে হলে তিতাসের পাড়ে দীর্ঘশ্বাস ঘনীভূত হয়। বুক ভারী হয়ে আসে। মনে পড়ে ‘‘তিতাস একটি নদীর নামে মালো জীবন ধরা, এই জীবনে ক্লান্তি আছে, আছে অভাব খরা। তিতাস নদী বয়ে গেছে, আজও বয়ে যায়, মালো জীবন থমকে আছে, সুবলা সেথায় নাই।’’

মোবাইল ব্যবহারে সর্তক হোন


মোবাইল ব্যবহারে সর্তক হোন

গণশক্তির প্রতিবেদন

মোবাইলে আপনি কতক্ষণ কথা বলেন। আধ ঘণ্টা না তারও বেশি ? যদি বেশি সময় কথা বলেন তাহলে এখনই অভ্যাস বদলে ফেলুন। আপনার মোবাইল সেটটি যতই দামী আর আধুনিক হোক না কেন তা কিন্তু আপনার ক্ষতিই করে দেবে। আর সেই ক্ষতি সামলাতে আপনি উজাড় হয়ে যেতেও পারেন।

মোবাইলে বেশি কথা বললে টিউমার হয়। রোগ-বালাই বাড়তে থাকে। এই নিয়ে তর্ক-বির্তকের শেষ নেই। ভারতে ইতোমধ্যে দুই রাজ্যের হাইকোর্ট এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে মোবাইলের ক্ষতি নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছে। এর মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু পরিষ্কার জানিয়ে দিলো আর আলোচনা বা বিতর্ক করে লাভ নেই। মোবাইলের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ দারুণ ক্ষতিকর। ১০বছর ধরে প্রতিদিন আধঘণ্টা (৩০মিনিট) ধরে কথা বলে চললে মস্তিষ্কে টিউমার হতে পারে। হতে পারে মস্তিষ্ক ক্যান্সারও। তরঙ্গায়িত ঐ ক্যান্সারের নাম গ্লিয়োমা।

মোবাইল তরঙ্গের ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু ১৪টি দেশের ৩১জন বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করেছিলো। ঐ কমিটির নাম দেওয়া হয়েছে ইন্টারন্যাশানাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার বা আই এ আর সি। এই কমিটি ৮দিন ধরে টানা একটি কর্মসূচী নিয়েছিলো। তা শেষ হয়েছে ৩০শে মে। এরপরেই ফ্রান্সের লিঁও শহরে ১লা জুন রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলেন করে বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষা ও গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্টের সারমর্ম প্রকাশ করলো। হু’র তরফে পরিষ্কার বলে দেওয়া হলো – হ্যাঁ, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার ক্ষতিকারক। মোবাইলের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ ভয়াবহ। এটি ক্যান্সার রোগ ঘটাতে পারে। অর্থাৎ মোবাইল তরঙ্গ ‘কার্সিনোজেনিক’।

হু অবশ্য মোবাইলের ক্ষতিকর দিকের সন্ধান দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি। জানিয়েছে কিছু সহজ বাঁচার উপায়ও। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মোবাইল কানে চেপে কথা বলার অভ্যাস ত্যাগ করাটা প্রথম দরকার। পারলে ‘হ্যান্ডস ফ্রি গ্যাজেট’ বা কানে গোজা যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। স্পিকার ফোনে কথা বলার অভ্যাসটা বরঞ্চ ভালো। পারতপক্ষে বদ্ধ ঘরে বসে মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলবেন না। মেসেজ করলে কাজ মিটে গেলে মোবাইলে কথা না বলে মেসেজ লিখে পাঠিয়ে দিন। ফোনে ব্লু-টুথ থাকলেও সারাদিন এটাকে চালু রাখবেন না। এতদিন মোবাইল টাওয়ার নিয়ে অসংখ্য গবেষণা আর সমীক্ষা প্রকাশিত হলেও মোবাইল সেট নিয়ে হু’র এই বিবৃতি সত্যিই চিন্তার।

প্রকৃতি কিন্তু আপনার সেবায়

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করার দিন। পরিবেশ আন্দোলনের রূপরেখা টানার দিনও ৫ই জুন। বিজ্ঞান গবেষক থেকে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকের কাছে এদিনটি দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ। ব্যস্ততা আর শত কাজের মধ্যে পরিবেশকে একটু কাছ থেকে দেখার, একটু পরখ করার দিনও ৫ই জুন। প্রতিবছরের মতো এবছরকেও রাষ্ট্রসংঘ নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে যাচাই করে নিয়েছে। তাই এবছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল ভাবনা — বনাঞ্চল : প্রকৃতি আপনার সেবায়। পরিবে-প্রকৃতির অনন্য অবদানের কথা আবারও মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই এবারে রাষ্ট্রসংঘের তরফে এই স্লোগান মিলেছে। ২০১১ সালকে অবশ্য আগেই রাষ্ট্রসংঘ আন্তর্জাতিক বনাঞ্চল বর্ষ বলে ঘোষণা করেছে। সেই দিক থেকেও এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ভাবনাটি বিশেষ অর্থবহ।

ভারতে জনসংখ্যা আজ ১২০কোটিতে ঠেকেছে। প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই সংখ্যা। বসবাস আর খাদ্যের সঙ্কুলান করতে মানুষকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় বনমুখী হতেই হচ্ছে। চাষের জমি ক্রমশ খেয়ে নিচ্ছে শিল্প আর আবাসন। তাই বনকে দখল করে নিয়ে বাড়াতে হচ্ছে কৃষিজমি। বেঁচে থাকার তাগিদে। মুখে খাবার জোগানের আশায়। কিন্তু বনাঞ্চলের সীমানা কমতে থাকলে তো সমূহ বিপদ। বন্যপ্রাণ হটিয়ে, গাছ কেটে জমি কেড়ে নিতে থাকলে একদিন এই পৃথিবী আর মানুষের বাসযোগ্য থাকবে না। খাদ্য-খাদকের সেই পুরানো শৃঙ্খল ভেঙে পড়বে। তাই স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য ঠিক কতটা বনাঞ্চলকে নেওয়া যেতে পারে, কতটা না রাখলে চলবেই না তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। শুধু সরকারী প্রকল্প আর আইন দিয়ে চলবে না। চাই সাধারণ মানুষের যোগদান।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে যে হাতে নগরায়ন বাড়ছে তাতে গ্রাম অনেকদিন আগেই শহর হয়ে গেছে। গ্রামীণ এলাকার বাইরে থাকা বনাঞ্চলে যদি চলে যায় তাহলে বাস্তুতন্ত্রই ভেঙে পড়বে। ভেঙে যাবে খাদ্য-খাদকের মৌলিক সম্পর্ক। বনসৃজন প্রকল্প আমজনতার সঙ্গে সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। এরমধ্যে রয়েছে বাড়তি চাপ প্রকৃতির। ভূমিকম্প, সামুদ্রিক ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বৈপরীত্যের বিরুদ্ধে গিয়ে পরিবেশের সুস্বাস্থ্য কামনা করাটা দারুণ কঠিন কাজ। তবে সেটাই করতে হবে। তা না হলে সুন্দরবনের বিশ্বের অনন্য ভৌগোলিক বৈচিত্র্যকে আর রক্ষা করা যাবে না। বিশ্ব পরিবেশ দিবস-বিশেষ এইদিনেই আমাদের সংকল্প নিতে হবে। এই দিনটি পালনে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে এগিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। শহর কলকাতার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা সদরে করা হচ্ছে রকমারী শোভাযাত্রা আর পরিবেশ সচেতনতা শিবির।

ফয়েজ, অসময়ে আপনাকে লিখছি ....

ফয়েজ, অসময়ে আপনাকে লিখছি ....

সঞ্চারী সেন

অতিবাহিত হওয়া রাত্রিকে ফের জাগিয়ে, চলো, আবার মন খুলে হেসে উঠি। প্রকৃত অর্থেই ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ ছিলেন আলোর পথযাত্রী। তাঁর শতবর্ষের সময়ে একটি স্মরণ।

      অসময় কারণ মন ভালো নেই। আপনার জন্মশতবর্ষ এমনিতে কত আনন্দ উৎসব বয়ে আনতে পারতো আমাদের জন্য। আপনার কবিতা, সে কবিতা থেকে গান, আপনাকে নিয়ে লেখা নানা কাহিনী, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র। সাহিত্যের ভূরিভোজ হতে পারতো। কিন্তু হলো না। সত্যি বলতে কি গত কয়েক মাস ধরেই আপনাকে নিয়ে লেখার কথা ভাবছি। শুরুও করছি, কিন্তু নানারকম পরস্পরবিরোধী আবেগ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে চিন্তার স্রোতকে। তবে এখন বাংলায় আষাঢ় মাস, মেঘের ছায়া ঘনিয়ে এসেছে, দূরবর্তী প্রিয়জনকে মনে করিয়ে দেবার অমোঘ সময়, তাই আর না লিখে পারলাম না। আপনাকে প্রিয়জন বলছি বলে আমাকে বে-আদব মনে করবেন না যেন। আসলে কবিরা এত সহজে আমাদের মনের কথা বুঝে ফেলেন আর এমন অবলীলায় তা প্রকাশও করেন যে তাঁদের সঙ্গে আপনা আপনিই একটা হৃদয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই আজ আপনাকে আমাদের মন খারাপের কথা খোলাখুলি লিখবো। তার আগে বলি, আপনার একশো বছরের জন্মদিনটি আমরা পালন করেছি ব্রিগেডে, লাখো জনতার জমায়েতে। মনে হয় এমন জন্মদিন পালন আপনাকে খুশি করতে পারবে, কারণ নিজের সারা জীবনটাকে আর ভেতরের কবিটিকে আপনি উৎসর্গ করেছিলেন মানুষেরই সেবায়। ব্রিগেডের সেই মহাসভায় মহম্মদ সেলিম পড়লেন আপনার কবিতা —

কাটতে ভি চলো বঢ়তে ভি চলো

বাজু ভি বহোৎ হ্যায় সর ভি বহোৎ

চলতে ভি চলো কে

ডেরে মন্‌জিল হি পে ডালে যায়েঙ্গে —

মাথা অনেক হাতও অনেক

যতই কাটুক এগিয়ে চলো

পথের প্রান্তে পৌঁছে তবেই

থামবে চলা এগিয়ে চলো ....

সেই তেরোই ফেব্রুয়ারিতে যখন এই কবিতা পড়া হয়, ততদিনে বাংলার পশ্চিম অংশে তিনশো আশিজনেরও বেশি কমরেড খুন হয়ে গিয়েছিলেন সাম্রাজ্যবাদীদের গুপ্ত সেনাবাহিনীর হাতে। আপনার কবিতা সেদিন আমাদের পথ চলতে সাহায্য করেছিল বরাবরের মতই।

ব্রিগেডের কথা আরও একটু বলি। মনের কথা বলবো আগেই বলে নিয়েছি, তাই আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবার অপরাধ বা গুস্তাখি মাফ করে দেবেন। কলকাতার দূরবর্তী এক প্রান্তে আমার বসবাস। সেখান থেকে যে যানটির সকলকে নিয়ে ব্রিগেডে যাবার কথা সেটি আসতে দেরি ছিল। পথে একটি মহামিছিলে পা মেলাবার তাগিদে অন্য কয়েকজনের সাথে আর একটি জায়গা থেকে আসা বাসে উঠে পড়েছিলাম। বললে বিশ্বাস করবেন হয়তো সেটি যেন শুধু একটি যান নয়, স্বতোৎসারিত স্লোগান, আন্দোলিত গান আর লড়াইয়ের চলমান প্রতীক। সব মানুষ একভাবে, একসুরে, একছন্দে নিজেদের মনের ছবি এঁকে চলেছে। ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ ধ্বনি কিংবা ‘কারা মোর ঘর ভেঙেছে স্মরণ আছে’ এমন সব গান এক থেকে বহুর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরছে। কেউ সাময়িক অসুস্থ বোধ করলে হাজারটা হাত তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, পরক্ষণেই আবার সে স্লোগান শুনে চাঙ্গা হয়ে উঠছে। সদ্য দেখা হওয়া কমরেডরা সকলেই যেন একে অন্যের বহুদিনের চেনা। মাঝপথে মিছিলে যোগ দিতে নেমে যাবার সময় বাসের দূরবর্তী কোণ থেকে এমনই একজন চেঁচিয়ে বললেন — ‘কমরেড, আবার দেখা হবে।’ দেখা হবে লড়াইয়ের ময়দানে। স্লোগান দিতে দিতে বাস চলে গেল। এরপর তো হারিয়ে যাওয়া সেই আকাশ উদ্বেল করা বিপুল তরঙ্গের মাঝে।

আমাদের সমালোচকরা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে রেজিমেন্টেশনের অভিযোগ আনেন। এতে নাকি মানুষের নিজস্ব সত্তা বিনষ্ট হয়। কিন্তু সত্যি বলছি ফয়েজ সাহেব, এই রেজিমেন্টেশনের অঙ্গ হতে পেরে আমার প্রায় পঞ্চাশ বছরের অস্তিত্বটার প্রবল গর্ব হচ্ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যাঁকে আপনারা ‘টেগোর’ বলেন, তাঁর গানের কলি মনে পড়ে যাচ্ছিল, ‘বুকের মাঝে বিশ্বলোকের সাড়া’ পাচ্ছিলাম। সেলিমের পড়া কবিতাটির এক জায়গায় আপনি লিখেছেন —

নিঃস্ব মানুষ উঠে দাঁড়াও এসেছে সময়

তখ্‌ত ও তাজ ছিন্ন হবে হয়েছে সময় ...

অ্যায় খাক জশীনোঁ উঠ ব্যায়ঠো,

উয়ো ওয়াক্ত করীব আ পহুঁচা হ্যায়

যব তখ্‌ত গিরায়ে যায়েঙ্গে

যব তাজ উছালে যায়েঙ্গে...

এ আপনার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতি জেহাদ। এখন সাম্রাজ্যবাদের চেহারা পালটেছে। সরাসরি দেশ দখলের চেয়েও অনুগত সরকারের মাধ্যমে সে দেশে পুঁজি লগ্নিতে তাদের আগ্রহ বেশি। এভাবেই কয়েক বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে ব্যাঙ্কে মানুষের গচ্ছিত আমানত রাতারাতি গায়েব হয়ে গেছে। এ দেশেও তেমনটা ঘটতে চলেছে। গরিব মেহনতী মধ্যবিত্তের সমষ্টিগত প্রতিরোধের এ মুহূর্তে বড় প্রয়োজন।

আর ততটাই প্রয়োজন ওদেরও এই প্রতিরোধ ভাঙার। ওরা অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রতিনিধিদল, আমরা অর্থাৎ খেটে খাওয়া মানুষ। দুয়ের মধ্যে সংগ্রাম।

সংগ্রাম নগরে গ্রামে

গৃহে রাজপথে

লড়াই দুর্ভিক্ষে সম্পদে

ধ্বংস আর সৃষ্টিতে।

চতুর্দিক গভীর লাল

শূন্য হাতের মানুষ জাগো

ডাক এসেছে রণভূমি থেকে।

ইন্‌ দোনোঁ মে রণ পড়তা হ্যায়

নিত্‌ বস্তি বস্তি নগর নগর

হর বসতে ঘরকে সিনে মে

হর চল্‌তি রাহকে মাথে পর...

...সব সাগর নিলে লাল ও গহর

ইস্‌ বাজি মে বর যাতে হ্যাঁয়

উঠো সব খালি হাঁথো কো

ইস রণ সে বুলওয়ে আতে হ্যাঁয়।





ফয়েজ সাহেব, আপনাকে বাংলার এবারের নির্বাচনের খবর কিছু দেব। কারণ নির্বাচন আমাদের কাছে অন্যতম রাজনৈতিক সংগ্রাম। অন্যতম, একমাত্র নয়। কিন্তু এবারের এই নির্বাচনের একটা বিশেষ গুরুত্ব ছিল। সাম্রাজ্যবাদীরা যখন আফগানিস্তান, ইরাক দখল করবার পর আপনার পরবর্তী দেশ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসের কৌশলে দুর্বল করে দিয়ে পরমাণু চুক্তির নামে ভারতবর্ষের দিকে হাত বাড়ালো, তখন একমাত্র প্রতিরোধ উঠে এসেছিল বামপন্থী, বিশেষ করে কমিউনিস্টদের কাছ থেকে। তাই এই শক্তিকে দুর্বল করবার জন্য ওরাও এবারের নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল।

এবং ওরা সাময়িকভাবে সফল হয়েছে।

ফয়েজ সাহেব, সত্যি বলতে লজ্জা নেই, নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবার পর ভোরবেলাগুলো আপনার কবিতা মনে করিয়ে দিচ্ছিল —

এ ক্ষতবিক্ষত আলোক

রাত্রিরূপী সকাল

এ সে প্রভাত নয়

যার প্রতীক্ষা ছিল এতকাল ....

‘ইয়ে দাগ দাগ উজালা, ইয়ে শব গজিদহ্‌ সহর ....

উয়ো ইন্তেজার থা জিসকা, ইয়ে উয়ো সহর তো নহীঁ

অথবা,

আকাশনদীর স্রোত থেমে গিয়ে

মিলিয়ে গেছে দিগন্তে

বিবর্ণ জ্যোৎস্না

নেমে এসেছে মাটির কিনারায়

ঝিকিমিকি তারারা হারিয়ে গেছে, বাতাসহীন শূন্যতায়

খাবি খাচ্ছে গাছের পাতারা ....

আমাদের ভুল বুঝবেন না। নির্বাচনে জেতা হারাটা বড় নয়। মানুষের একটা বড় অংশ প্রত্যাখ্যান করেছেন এ ব্যথাও তত বেশি নয়, কিন্তু কোথাও একটা প্রতারিত হবার যন্ত্রণা কাজ করছে।

অথচ যখন বহুদিনের চেনা প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছি, কত অকপট ছিলেন তাঁরা। যাঁরা সমর্থন এখনও করেন, যাঁরা করেন না, যাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত, কেউই তো মনের কথা লুকোননি। এই গণতান্ত্রিক পরিবেশ গত সাড়ে তিন দশক ধরে আমরা এই বাংলায় বপন এবং লালন করেছি। তারপর লক্ষ মানুষের সঙ্গে পথ চলা। বিশ্বাস করুন ফয়েজ সাহেব, যতটা পথ হেঁটেছি, তাতে শিমূল পলাশের পর বাংলায় কৃষ্ণচূড়াই ফোটার কথা।

তবু আমরা পরাজিত।

আপনিই লিখেছেন,

দুঃখ থেমে যাবে, শোক করো না

ফিরে আসবে বন্ধু, হৃদয় জুড়োবে

শোক করো না, বিলাপ করো না ....

আপনার কাব্য সমগ্র ঘাঁটতে ঘাঁটতে এ কবিতাগুলোই বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ঝাপসা হয়ে আসা অক্ষরগুলো এও জানান দিচ্ছে যে নির্বাচনের আগে পরে শুধু বামপন্থী বলে খুন হয়ে যাওয়া বন্ধুরা আর ফিরে আসবে না। ফিরবে কি ঘরছাড়াদের দল? নাকি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে মহাপ্রস্থানের যাত্রীদের সারি?

এখন আমরা গভীর সঙ্কল্পে পার্টি অফিস রক্ষা করতে চাইছি। জয়ী দলের বিজয় মিছিলের বোমা, পটকার দাপটের সামনে দৃঢ় চোয়ালে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা পার্টিকর্মী, আতসবাজির আলোয় দেখা সেনাপতির চোখে সজল রূপোলি রেখা, মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিন-স্তালিন-কাকাবাবুর ছবি বুক দিয়ে রক্ষা করার শপথ, বাঁচিয়ে রাখা মার্কসবাদী দর্শনকে, এ সবই আপনার কবিতার মতো —

হৃদয়ের কথা খোদিত এ শিলালেখে

অটুট রইবে কলম আমার চেতনা

কঠিন সময় হোক না কঠিনতর

ঘাতক কৃপাণ আঘাত হানুক আরো

অন্তিমক্ষণ রেখে যাবে শেষ রচনা।

হম্‌ পরওয়ারিশ্‌-এ-লোহ ও কলম করতে রহেঙ্গে

যো দিল পে গুজরতি হ্যাঁয় রকম করতে রহেঙ্গে...

এখন সাম্রাজ্য শিবির আর আমাদের রাজধানী নয়াদিল্লিতে খুশির বাতাস বইছে। বললে বিশ্বাস করবেন না ফয়েজ সাহেব, অনেকটা যেন সেই বার্লিনের দেওয়াল ভাঙা অথবা টুকরো হয়ে যাওয়া সো‍‌‍‌ভিয়েতের বিভিন্ন রাষ্ট্রে লেনিনের মূর্তি টেনে নামানোর মতো উল্লাস। লেনিন মূর্তির ওপর আক্রমণ আমাদের বাংলাতেও হচ্ছে। জানি এ সব কিছুই এখন স্বাভাবিক।

আপনাকে এ সময়ে লেখা কারণ একশো বছর পরেও আপনার জবানিতে অপরিবর্তিতভাবে রয়ে যাচ্ছে মেহনতী মানুষের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আপনার বিশ্বাসের কথা। একটি কাব্যগ্রন্থের ভূমিকায় আপনি লিখেছেন, কবিতার কাজ শুধু অবলোকন নয়, যুদ্ধ ঘোষণাও। ‘শায়রী কা কাম কুছ মুশাহিদা হি নহীঁ, মুজাহিদা ভি উস্‌ পর ফর্জ্‌ হ্যায়।’

চারপাশের নিজেকে ঘিরে ঘুরে মরা যশো লোভীদের মাঝে আপনার মতো রোমান্টিক যোদ্ধারা আমাদের সহায়। তাই অসময় নয়, বরং এটাই সময় আপনাকে লেখার। শুরুতে ভুল লিখেছি। আমরা জানি নির্বাচনে হেরে যাওয়ার অর্থ বামপন্থার পরাজয় নয়। যতদিন এ পৃথিবীতে শোষণ থাকবে উৎপাদক শক্তি আর মালিকানার দ্বন্দ্ব থাকবে, সে দ্বন্দ্ব নিরসনের অভিঘাত থাকবে, ততদিন হাজার চাইলেও মার্কসবাদ থেকে মুক্তি মিলবে না ওদের। ওরা অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রতিনিধিদল, আমরা মানে শ্রমজীবী মানুষ, শ্রমই যাদের একমাত্র অবলম্বন।

ফয়েজ সাহেব, লিখতে যখন বসেইছি আর একটু গুস্তাখি করবো। ভারতে থেকে যাওয়া আপনার প্রিয় বন্ধুদের মধ্যে কৃষণ চন্দর ছিলেন অন্যতম। তাঁর লেখায় একটি ঘটনার কথা পড়েছি। আপনার মনে আছে নিশ্চয়ই, তবু স্মৃতির চিরাগটাকে একটু উসকে দিতে চাই।

তখন ভারত আর পাকিস্তানের সম্পর্ক খুব খারাপ। মুখ দেখাদেখি বন্ধ। ভারতের বাইরে, সম্ভবত মস্কোতে এশীয় সাহিত্যিকদের সম্মেলন হচ্ছে। আলাদা আলাদা টেবিলে নিজ নিজ দেশের পতাকা দ্বারা চিহ্নিত হয়ে কবি লেখকরা বসে। সেবার পাকিস্তানের প্রতিনিধি আপনি, ভারতবর্ষের থেকে গেছেন কৃষণ চন্দর। বাকি দেশের প্রতিনিধিরা ভারত-পাক সম্পর্ক সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।

হঠাৎ নিজের জায়গা থেকে উঠে এলেন আপনি। এগিয়ে এলেন ভারতের টেবিলের দিকে। উঠে দাঁড়ালেন কৃষণ চন্দরও।

তারপর পরস্পরের দিকে রীতিমত ধাবিত হয়ে আপনারা জড়িয়ে ধরলেন একে অপরকে। চারদিকের প্রকৃতই বিদ্বজ্জনেরা তখন করতালিতে মুখর করে তুলেছেন গোটা আবহকে। আপনারা দু’জন দু’জনের চোখে চোখ রেখে কী কথা বলেছিলেন সেদিন?

সেকথা জানতে পারলে ভালো হত। ভালো হত, কারণ উর্দু যে দুটি দেশের ভাষা, তাদের মধ্যে সংঘাত ঘটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে দু’দেশের মানুষের মত এই ভাষাটিকেও। নাহলে, আপনার জন্মোৎসবে সীমার অবসান ঘটিয়ে কত আনন্দ উৎসবের জন্ম হতে পারত। হতে পারত সাহিত্যের ভূরিভোজও। প্রথমেই যেমন লিখেছি।

এই সময়ে আপনার মতো বামপন্থী কবি সাহিত্যিকদের যে আমাদের বড় প্রয়োজন।

ভারত-পাকিস্তানের সমস্ত শ্রমজীবী মানুষকে উদ্দেশ্য করে আপনি লিখেছিলেন, ‘হিন্দুস্তান পাকিস্তানের সমস্যার সমাধান এটাই যে দুটি দেশেরই মেহনতী মানুষ যেন নিজেদের অধিকার কায়েম করে, নিজের নিজের দেশের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে। এরফলে দু’দেশের মধ্যেকার ঘৃণা বা নফরৎ তৈরি করার ঘটনা, যার আড়ালে সাম্রাজ্যবাদীরা আবার থাবা বসানোর চেষ্টা করছে, তা রূপকথার গল্পের দুষ্ট শক্তির মতই অদৃশ্য হয়ে যাবে।’

আরো কিছু সংকট কাজ করছে আমাদের এই সময়ে। সজ্জাদ জহীর সাহেবের লেখায় পড়েছি, প্রথম যখন আপনারা প্রগতি লেখক তৈরি করেন, মূলত উর্দু সাহিত্যের বিস্তার ছিল যে জায়গায়, অর্থাৎ পশ্চিম ভারতের অমৃতসর, লাহোর ইত্যাদি শহরে, সেখানকার লেখকদের দলে টানতে আপনাদের বেশ কসরৎ করতে হয়েছিল।

সেসময়ের বিদ্বজ্জনেরা কুণ্ঠিত ছিলেন, কারণ তাঁরা ব্রিটিশ রাজশক্তিকে চটাতে চাইতেন না। আপনাদের মত জেল খাটার সাহস কজনেরই বা থাকে!

অথচ এখনকার সমস্যাটা অনেকটা উলটপুরাণের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমাদের এই বাংলায় যে সময়ে কাব্য-সাহিত্য-নাটক কোনওকিছুর ওপরেই কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না, সেসময়ের শেষ দিকেই গজিয়ে উঠলেন কিছু ‘সরকার বিরোধী’ বিদ্বজ্জন, তাঁরা বিরোধিতার মৌতাতে আজ এমনকি একটি স্বৈরাচারী প্রবণতার দলকে ক্ষমতায় আনতে সাহায্য করে ফেললেন।

এই সময়ে তাই আপনাদের বড় প্রয়োজন ছিল। লোকে আসল নকলের তফাত বুঝতে পারত। এসব কারণেও বড় কষ্টে আছি সকলে।

ফয়েজ সাহেব, আপনার লেখা একটি গান গাইবার অনুমতি চাই আমরা। সেই গান, যা আমাদের উজ্জীবিত করবে। সে গান গাইতে গাইতে জলের মধ্যে আমরা মিনের মতো জনসমুদ্রে মিশে যাব। ব্রিগেডে পড়া কবিতাটাও তো গানই ছিল, আপনি নাম দিয়েছিলেন সঙ্গীত, তরানা।

দয়া করে ইজাজত দিন। আপনার অনুমতি আমাদের খুশির প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারে।

চলো ফিরসে মুস্‌কুরায়েঁ চলো ফিরসে দিল জলায়েঁ

যো গুজর গয়ী হ্যাঁয় রাতেঁ উন্‌হে ফির জাগাকে লায়েঁ

যো বিসর গয়ী হ্যাঁয় বাতেঁ উন্‌হে ইয়াদ মেঁ বুলায়েঁ

চলো ফিরসে দিল লগায়েঁ চলো ফিরসে মুস্‌কুরায়েঁ —

চলো আবার হেসে উঠি। মনের আলো জ্বালিয়ে অতিবাহিত হওয়া রাতকে ফের জাগিয়ে দিয়ে, বিস্মৃতপ্রায় কথাগুলো স্মরণে এনে, প্রাণ খুলে চলো আবার হেসে উঠি।

আমাদের অভিবাদন গ্রহণ করুন।