Tuesday, December 30, 2014

জ্যোতি বসু.... শতবর্ষে শ্রদ্ধা [সৌজন্যেঃ- সম​য়ের সাথে]



অবাধেই জমি অধিগ্রহণ করতে ফের অর্ডিন্যান্স করলো কেন্দ্র

সৌজন্যে:- সময়ের সাথে (নয়াদিল্লি, ২৯শে ডিসেম্বর)-

এ বছরের জানুয়ারি মাসে আইন হয়েছিল। কার্যত তার অর্ধেকই বাতিল হয়ে গেল বছর না ঘুরতেই। 

বহু টানাপড়েনের পরে ইউ পি এ সরকারের শেষ প্রান্তে চালু হওয়া জমি অধিগ্রহণ আইনের বহু ধারা বাতিল করে সংশোধনী অর্ডিন্যান্স আনলো নরেন্দ্র মোদী সরকার। সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই অর্ডিন্যান্স অনুমোদন করেছে। নতুন অর্ডিন্যান্সের ফলে জমি অধিগ্রহণ করতে ‘সম্মতি’, গণশুনানি, সামাজিক প্রভাব সমীক্ষার আর কার্যত কোনো প্রয়োজন হবে না। চালু আইনে শিল্প তৈরির অসুবিধা হচ্ছে কারণ দেখিয়ে এমনকি বহুফসলী জমিকেও অবাধে অধিগ্রহণের রাস্তা ফের খুলে দেওয়া হলো। তা করা হলো সংসদের শীত অধিবেশন শেষ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। অর্থনৈতিক সংস্কারের বেশ কিছু কর্মসূচীতে সংসদের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক অর্ডিন্যান্সের পথে যাচ্ছে মোদী সরকার। বীমায় বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া, কয়লা ক্ষেত্রে কার্যত বেসরকারীকরণের লক্ষ্যেও উপর্যুপরি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে। এবার বহুচর্চিত জমি অধিগ্রহণ, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত আইনও বদলে দেওয়া হলো সংসদে বিন্দুমাত্র আলোচনা ছাড়াই। এরপরে খনি ক্ষেত্রে বেসরকারী ও বিদেশী পুঁজিকে আরো অনুপ্রবেশের সুযোগ দিতে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তুতি চলছে। 


বেশ কয়েক বছর ধরে জমি অধিগ্রহণ ঘিরে দেশের নানা প্রান্তেই বিক্ষোভ-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে থাকায় স্বাধীনতার পর থেকে চালু এ সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের দাবি ওঠে। অভিযোগ উঠেছিল, কৃষকদের জমি চলে যাচ্ছে কর্পোরেট ক্ষেত্রের কাছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নামে বিপুল পরিমাণ জমি দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর হাতে। বেসরকারী শিল্পক্ষেত্রের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে নির্বিচারে। অনেক ক্ষেত্রেই জমিহারাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ, জমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবিকার পুনর্বাসন ছাড়াই এই প্রক্রিয়া চলছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে জমি অধিগ্রহণ আইনে পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ইউ পি এ সরকারের আমলেই। সেই আইনের খসড়া নিয়ে কালক্ষেপ হয়, বারংবার আলোচনা হয় সরকারী স্তরে এ সংসদীয় কমিটিতে। অবশেষে ২০১৩সালে নতুন আইন অনুমোদন হয় এবং এ বছরের জানুয়ারি মাসে অস্তগামী ইউ পি এ সরকারের আমলেই তা চালু হয়। 

সোমবার সেই আইনের গুরুতর পরিবর্তন করে নতুন অর্ডিন্যান্স করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দাবি করেছেন, ক্ষতিপূরণের কোনো পরিবর্তন করা হচ্ছে না। কিন্তু ‘পাঁচটি ক্ষেত্রে’ জমি অধিগ্রহণের সময়ে ‘জমির মালিকদের সম্মতি’ নেবার ধারা তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই পাঁচটি ক্ষেত্র হলো: জাতীয় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ সহ গ্রামীণ পরিকাঠামো, শিল্প করিডর, সামাজিক পরিকাঠামো যেখানে জমির মালিকানা সরকারেরই থাকবে। এই পাঁচ ক্ষেত্রে মধ্যে শুধু সরকারী উদ্যোগই নয়, সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগ বা পি পি পি-ও থাকবে। জেটলির ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ ( বেসরকারী বিদ্যুৎ উৎপাদনও), আবাসন নির্মাণ, রাস্তা এবং শিল্প করিডরের নামে বেসরকারী শিল্প প্রকল্পের গুচ্ছের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার ক্ষেত্রে বর্তমান আইনে চালু ‘৭০শতাংশ জমির মালিকের সম্মতি’ লাগবে না। কোনো সম্মতির শর্তই আর কার্যকর হবে না। চালু আইনে ছিলো, কোনো জমি অধিগ্রহণের আগে সামাজিক প্রভাবের সমীক্ষা করতে হবে। অর্থমন্ত্রী তা-ও বাতিল করে দিয়েছেন, ‘উন্নয়নের কাজে ব্যাঘাত’ বলে। দ্রুত প্রকল্প করার জন্য জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধাই যে কেন্দ্র আর মানবে না, তার ইঙ্গিত দিয়ে জেটলি বলেন, জমি নেবার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতার জন্য বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আটকে আছে। এই জটিলতা কাটাতেই এই সংশোধনী। 

একই সঙ্গে, চালু আইনে ১৩টি এমন ক্ষেত্র আইনের পরিধির বাইরে ছিলো যার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি জমি নেওয়া হয়। যেমন কয়লা ক্ষেত্রের এলাকা, খনি, জাতীয় সড়ক ইত্যাদি সংক্রান্ত আইন। নতুন সংশোধনীতে এই ক্ষেত্রগুলিকেও জমি অধিগ্রহণের মূল আইনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এইসব আইনের আওতায় অধিগৃহীত জমির মালিকরাও এবার থেকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন পাবেন বলে জেটলি দাবি করেছেন। উল্লেখ্য জমি অধিগ্রহণ আইন চালুর সময়ে সি পি আই (এম) এই ১৩টি পৃথক আইনকেও মূল আইনের অন্তর্ভুক্ত করার জোরালো দাবি সংসদে পেশ করেছিল। 

সোমবার এই অর্ডিন্যান্স অনুমোদনের পরে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের এত তাড়াহুড়ো কেন? সংসদের অধিবেশন পর্যন্ত সরকার অপেক্ষা করলো না কেন? কেন একের পর এক অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকার এগোচ্ছে? জেটলির সদম্ভ উত্তর, সরকারকে দৃঢ়তা নিয়েই নিজের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে হবে। সংস্কারের পথে সংসদ বা রাজনৈতিক ‘বাধা’ মান্য করা হবে না বলে আগেই জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী। সেই সূত্রই বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

তবে, জমি অধিগ্রহণ আইনের এই পরিবর্তনের দায় রাজ্যগুলির ওপরেই চাপিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সরকারী বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, রাজ্য সরকারগুলির মতামত, রাজ্যের রাজস্ব মন্ত্রীদের বৈঠক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলির সঙ্গে আলোচনায় প্রকল্প রূপায়ণের পথে বাধার কথা এসেছিল। তাই এই পথেই যাওয়া হচ্ছে। বস্তুত কয়েকদিন আগেই রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে আলোচনার অনুবর্তী হিসাবে একটি সরকারী ‘মিনিটস’ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে ১৯টি সংশোধনীর প্রস্তাব ছিলো। কিন্তু রাজ্য সরকারগুলির পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য এড়িয়েই শুধুমাত্র কেন্দ্রের চিন্তার সঙ্গে খাপ খায় এমন প্রস্তাবগুলিই বেছে নেওয়া হয়েছিল।