Wednesday, February 22, 2012

এথেন্সের পথ ধরে এবার লন্ডন— ২০১২


এথেন্সের পথ ধরে এবার লন্ডন— ২০১২

সৌমেন রায়

দেখতে দেখতে আবারও একটি বছর হাজির। ওলিম্পিকের বছর। লন্ডন ওলিম্পিক — ২০১২। চলতি বছরের ২৭শে জুলাই থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ১২ই আগস্ট। স্বভাবতই ওলিম্পিকের ৩০তম সংস্করণটি ঘিরে সদাই ব্যস্ত লন্ডন ওলিম্পিক আয়োজক সংস্থা।


খ্রিষ্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দে গ্রিসে বসেছিল প্রথম ওলিম্পিকের আসর। তবে আধুনিক ওলিম্পিক শুরু হয় ১৮৯৬ সালে। আধুনিক ওলিম্পিকের জনক পিয়ের দ্য কুর্বাতিনের আন্তরিক প্রচেষ্টার স্বার্থক রূপ পেয়েছিল ওই গ্রিসেই। সেই সঙ্গে শুরু হয় ওলিম্পিক ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। এর পর একে একে ২৯টি ওলিম্পিকের আসর বসে‍‌ছে। সেসবকে ঘিরে রয়েছে কতই না স্মৃতি।


গ্রিসের এথেন্সে বসেছিল প্রথম আধুনিক ওলিম্পিকের আসর। সেবার ১৪টি দেশ প্রতিযো‍‌গিতায় অংশ নিয়েছিল। ১০ দিনের ওই আসরে ২৪১ জন প্রতিযোগী ৪৩টি ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন। পদক তালিকায় শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১১টি সোনা জিতেছিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়াবিদরা। আয়োজক দেশ গ্রিসের ঝুলিতে ছিল ১০টি সোনা ১৭টি রুপো ও ১৯টি ব্রোঞ্জ পদক। দারুণভাবে নজর কেড়েছিলেন গ্রিসের ম্যারাথন রানার স্পিরিডন লুই। স্পিরিডন ছিলেন একজন জলবাহক। সোনার পদক জেতার পর জাতীয় বীরের সম্মান পেয়েছিলেন লুই। প্রথম ওলিম্পিকের ১০৮ বছর বাদে ২০০৪ সালে গ্রিস আবার ওলিম্পিকের দায়িত্ব পায়। সেবার অংশগ্রহণকারী দেশের সংখ্যা দাঁড়ায় ২০২তে।


১৯০০ সালে প্যারিস ওলিম্পিক থেকে মহিলা ক্রীড়াবিদরা অংশ নেন। সেবার ১৯ জন মহিলা প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। তারা তিনটি ইভেন্টে অংশ নেন। ১০ জন গলফ ৬ জন টেনিস এবং ৩ জন ক্রোকুইস্ট নামে এক ধরনের ইভেন্টে অংশ নিয়েছিলেন।


১৯১৬, ’৪০ এবং ’৪৪ সালে বিশ্বযুদ্ধের জন্য ওলিম্পিকের কোন আসর বসেনি। ১৯০৮ সালে লন্ডন ওলিম্পিকে ম্যারাথন দৌড়কে ঘিরে ঘটেছিল এক অভিনব ঘটনা। ব্রিটিশ রাজ-পরিবারের অনুরোধে ম্যারাথন দৌড় শুরু হয়েছিল ‘উইন্ডসর’ ক্যাসেল থেকে। শেষ হয় ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে। রাজ-পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাতে এই দৌড় দেখার সাক্ষী থাকতে পারেন, সেজন্যই এমন অনুরোধ। ক্যাসেল থেকে স্টেডিয়ামের দূরত্ব ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ। পরবর্তীকালে ১৯২৪ প্যারিস ওলিম্পিক থেকে ওই দূরত্বকে ওলিম্পিক ম্যারাথনের দূরত্বের পরিমাপ ধরা হয়ে আসছে। ওলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদ থেকে আরম্ভ করে ওলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের কাছেই ওলিম্পিক পতাকা অতি পবিত্র। ওলিম্পিকের জনক কুর্বাতিনের মস্তিষ্কপ্রসূত এই পতাকা মৈত্রী ও সম্প্রীতির প্রতীক। সাদা রঙের পতাকার মাঝে রয়েছে ৫ রঙের ৫টি রিং। নীল, হলুদ, কালো, সবুজ এবং লাল রঙের পাঁচটি রিং পাঁচ মহাদেশের পরিচয় বহন করছে। নীল রঙের রিংটি ইউরোপ মহাদেশের জন্য। হলুদ রঙটি এশিয়ার প্রতিনিধি। কালো রিং আফ্রিকা মহাদেশের। সবুজ — অস্ট্রেলিয়া ও ওশিয়ানিয়ার। লাল রঙের রিং বহন করছে আমেরিকা মহাদেশের জন্য। শুধু তাই নয়, বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের জাতীয় পতাকার কমপক্ষে কোন একটি রঙ রয়েছে ওই পাঁচ রঙের তালিকায়। পতাকার রিংগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত থেকে মহাদেশগুলির মধ্যে বন্ধুত্বের সহাবস্থানের বার্তা বহন করছে। ওলিম্পিক কখনোই কোন দেশের নামে হয় না। আয়োজনকারী দেশের কোন শহরের নামে হয়। যেমন ২০০৮-এর বেজিং ওলিম্পিক বা ২০১২ লন্ডন ওলিম্পিক। প্রত্যেক ওলিম্পিকেই আয়োজনকারী শহরের মে‌য়র ওলিম্পিক পতাক তুলে দেন পরবর্তী আয়োজনকারী শহরের মেয়রের হাতে।


আধুনিক ওলিম্পিককে ঘিরে এরকম আরো কতই না ঘটনা-কাহিনী রয়েছে স্মৃতিপটে। সে সব না হয় আরেকদিন।

No comments:

Post a Comment