Monday, March 26, 2012

উত্তম কুমার


উত্তম কুমার

উত্তম কুমার (সেপ্টেম্বর ৩১৯২৬ - জুলাই ২৪১৯৮০) (প্রকৃত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়) একজন কিংবদন্তিভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্রপ্রযোজক ও পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্রে জগতে তাঁকে 'মহানায়ক' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও তিনি সফলভাবে মঞ্চেও অভিনয় করেছিলেন ।
উত্তম কুমার
জন্ম নামঅরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়
জন্মসেপ্টেম্বর ৩১৯২৬
পেশাঅভিনেতা (চলচ্চিত্র ও মঞ্চ), প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক
কার্যকাল১৯৪৮-৮০
উচ্চতা৫'১১
দাম্পত্য সঙ্গীগৌরী চট্টোপাধ্যায়
সন্তানাদিগৌতম চট্টোপাধ্যায়

ছোটবেলা

উত্তম কুমারের আসল নাম অরুণ কুমার চ্যাটার্জী । তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।

প্রথম জীবন

কলকাতার সাউথ সাবারবান স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন এবং পরে গোয়েন্কা কলেজে ভর্তি হন। কলকাতার পোর্টে চাকরি নিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি।
সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে এসে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।

চলচ্চিত্র অভিনয়

উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল দৃষ্টিদান। এই ছবির পরিচালক ছিলেন নিতীন বসু। এর আগে উত্তম কুমারমায়াডোর নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তিলাভ করেনি। বসু পরিবার চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষন করেন। এরপর সাড়ে চুয়াত্তর মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন। সাড়ে চুয়াত্তর ছবিতে তিনি প্রথম অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম-সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়।
উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলি ব্যবসাসফল এবং প্রশংসিত চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় একসাথে অভিনয় করেছিলেন। এগুলির মধ্যে প্রধান হল - হারানো সুর, পথে হল দেরী, সপ্তপদী, চাওয়া পাওয়া, বিপাশা, জীবন তৃষ্ণা এবং সাগরিকা।
উত্তম কুমার বহু সফল বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তাঁর অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছোটিসি মুলাকাত, অমানুষ এবং আনন্দ আশ্রম অন্যতম। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় দু’টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রথমটি নায়ক এবং দ্বিতীয়টি চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা চলচ্চিত্রে তিনি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সৃষ্ট বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। রোমান্টিক ছবির ফাঁকে দু'একটা অন্য ছবিতেও অভিনয় করছেন তিনি। এর মধ্যে একদিন সত্যজিৎ রায়ের কাছ থেকে ডাক পেলেন উত্তম 'নায়ক' ছবিতে অভিনয়ের জন্য।
পাড়ার অভিনেতা থেকে অরিন্দমের নায়ক হওয়ার গল্প নিয়ে ছবিতে উত্তম অভিনয় করতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন নিজেকে। তবে উত্তম কুমার নিজেকে সু-অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করেন 'এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ছবিতে স্বভাবসুলভ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। কারণ এই ছবিতে উত্তম কুমার তার পরিচিত ইমেজ থেকে সরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। এতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। উত্তমের সেই ভুবন ভোলানো হাসি, প্রেমিকসুলভ আচার-আচরণ বা ব্যবহারের বাইরেও যে থাকতে পারে অভিনয় এবং অভিনয়ের নানা ধরন, মূলত সেটাই তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন।১৯৬৭ সালে 'এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি' ও 'চিড়িয়াখানা' ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন (তখন এই পুরস্কারের নাম ছিল 'ভরত')। অবশ্য এর আগে ১৯৫৭ সালে অজয় কর পরিচালিত 'হারানো সুর' ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন সমগ্র ভারতজুড়ে। সেই বছর 'হারানো সুর' পেয়েছিল রাষ্ট্রপতির সার্টিফিকেট অফ মেরিট। ইংরেজি উপন্যাস 'র্যানডম হারভেস্ট' অবলম্বনে ছবিটি নির্মাণ করা হয়। প্রযোজক ছিলেন উত্তম কুমার নিজেই। কমেডি চরিত্রেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী। 'দেয়া নেয়া' ছবিতে হৃদয়হরণ চরিত্রে অভিনয় করে সেই প্রতিভার বিরল স্বাক্ষরও রেখে গেছেন। এক গানপাগল ধনীপুত্র অভিজিৎ চৌধুরীর বাবা কমল মিত্রের সঙ্গে রাগারাগি করে বন্ধু তরুণ কুমারের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। বাবা গান পছন্দ করেন না, কিন্তু অভিজিৎ চৌধুরীর লক্ষ্য ছিল অনেক বড় শিল্পী হওয়া। নায়িকা তনুজার মামা পাহাড়ি স্যানালের বাড়িতে হৃদয়হরণ নামে ড্রাইভারের কাজ নেয়। সাবলীল অভিনয় দিয়ে ফুটিয়ে তোলেন হৃদয়হরণ চরিত্রটি। ছবিটির একটি আকর্ষণীয় সংলাপ ছিল “টাকাই জীবনের সবকিছু নয়”। এছাড়াও, অত্যন্ত চমকপ্রদ একটি গানও রয়েছে - “জীবন খাতার প্রতি পাতায়, যতোই করো হিসাবনিকাশ, পূর্ণ হবে না”। [১]
উত্তম কুমার অভিনীত, পরিচালিত, প্রযোজিত এবং সুরারোপিত চলচ্চিত্রের তালিকার জন্য দেখুন উত্তম কুমারের চলচ্চিত্রের তালিকা ।

অন্যান্য ভূমিকায় উত্তম

রোমান্টিক নায়ক ছাড়াও অন্যান্য চরিত্রেও তিনি ছিলেন অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। মঞ্চের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালবাসা। যার প্রমাণ হিসেবে পাওয়া যায় ১৯৫৫ সালে যখন তিনি বাংলা ছবির সুপার হিরো। শত ব্যস্ততার মাঝেও মঞ্চের ডাকে সাড়া দিয়ে 'শ্যামলী' নাটকে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমার বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ছোটিসি মুলাকাত (১৯৬৭), দেশপ্রেমী (১৯৮২) ও মেরা করম মেরা ধরম (১৯৮৭) অন্যতম। উত্তম কুমার পরিচালক হিসেবেও সফল। কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী (১৯৮১), বনপলাশীর পদাবলী (১৯৭৩) ও শুধু একটি বছর (১৯৬৬) ছবির সাফল্য তাই প্রমাণ করে।
সঙ্গীতের প্রতিও ছিল তার অসীম ভালবাসা। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় কিংবা মান্না দে'র গানেই সবচেয়ে বেশি ঠোঁট মিলিয়েছেন উত্তম। ছবির গান রেকর্ডিংয়ের সময় শিল্পীর পাশে বসে তার অনুভূতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করতেন। এতে করে না কি পর্দায় ঠোঁট মেলাতে তার বেশ সহজ হতো। সঙ্গীতপ্রেমী উত্তম ‘কাল তুমি আলেয়া’ ছবির সবগুলো গানের সুরারোপ করেন। ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। অভিনেতা প্রযোজক, পরিচালক, সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন সফল।



No comments:

Post a Comment