Wednesday, January 30, 2013


‘‘ মায়ের কাছে চিঠি ’’
—তসলিমা নাসরিন

কেমন আছ তুমি?
কতদিন, কত সহস্র দিন তোমাকে দেখি না মা,
কত সহস্র দিন তোমার কন্ঠ
শুনি না,
কত সহস্র দিন কোনো স্পর্শ নেই
তোমার।
তুমি ছিলে, কখনও বুঝিনি ছিলে।
যেন তুমি থাকবেই, যতদিন আমি থাকি ততদিন তুমি-
যেন এরকমই কথা ছিল।
আমার সব ইচ্ছে মেটাতে যাদুকরের মত।
কখন আমার ক্ষিদে পাচ্ছে,
কখন তেষ্টা পাচ্ছে,
কি পড়তে চাই, কী পরতে,
কখন খেলতে চাই, ফেলতে চাই,
মেলতে চাই হৃদয়,
আমি বোঝার আগেই বুঝতে
তুমি।
সব দিতে হাতের কাছে, পায়ের
কাছে, মুখের কাছে।
থাকতে নেপথ্যে।
তোমাকে চোখের আড়ালে রেখে, মনের আড়ালে রেখে
যত সুখ আছে সব নিয়েছি নিজের
জন্য।
তোমাকে দেয়নি কিছু কেউ, ভালবাসেনি,
আমিও দিইনি, বাসিনি।
তুমি ছিলে নেপথ্যের মানুষ।
তুমি কি মানুষ ছিলে?
মানুষ বলে তো ভাবিনি কোনোদিন,
দাসী ছিলে, দাসীর মত সুখের যোগান দিতে।
যাদুকরের মত হাতের কাছে, পায়ের কাছে,
মুখের কাছে যা কিছু চাই দিতে, না চাইতেই দিতে।
একটি মিষ্টি হাসিও তুমি পাওনি বিনিময়ে,
ছিলে নেপথ্যে, ছিলে জাঁকালো উৎসবের বাইরে
নিমগাছতলে অন্ধকারে, একা।
তুমি কি মানুষ ছিলে !
তুমি ছিলে সংসারের খুঁটি,
দাবার ঘুঁটি, মানুষ ছিলে না।
তুমি ফুঁকনি ফোঁকা মেয়ে,
ধোঁয়ার আড়ালে ছিলে,
তোমার বেদনার ভার একাই বইতে তুমি,
তোমার কষ্টে তুমি একাই কেঁদেছো।
কেউ ছিল না তোমাকে স্পর্শ করার, আমিও না।
যাদুকরের মত সারিয়ে তুলতে অন্যেরঅসুখ-বিসুখ,
তোমার নিজের অসুখ সারায়নি কেউ,
আমি তো নইই, বরং তোমাকে,
তুমি বোঝার আগেই হত্যা করেছি।

তুমি নেই, হঠাৎ আমি হাড়ে-
মাংসে-মজ্জায় টের পাচ্ছি তুমি নেই।
যখন ছিলে, বুঝিনি ছিলে।
যখন ছিলে, কেমন ছিলে জানতে চাইনি।
তোমার না থাকার বিশাল পাথরের তলে চাপা পড়ে আছে আমার দম্ভ।
যে কষ্ট তোমাকে দিয়েছি,
সে কষ্ট আমাকেও চেয়েছি দিতে, পারিনি।
কি করে পারব বল!
আমি তো তোমার মত অত নিঃস্বার্থ নই,
আমি তো তোমার মত অত বড় মানুষ নই।‘‘ মায়ের কাছে চিঠি ’’
     তসলিমা নাসরিন

কেমন আছ তুমি?
কতদিন, কত সহস্র দিন তোমাকে দেখি না মা,
কত সহস্র দিন তোমার কন্ঠ
শুনি না,
কত সহস্র দিন কোনো স্পর্শ নেই
তোমার।
তুমি ছিলে, কখনও বুঝিনি ছিলে।
যেন তুমি থাকবেই, যতদিন আমি থাকি ততদিন তুমি-
যেন এরকমই কথা ছিল।
আমার সব ইচ্ছে মেটাতে যাদুকরের মত।
কখন আমার ক্ষিদে পাচ্ছে,
কখন তেষ্টা পাচ্ছে,
কি পড়তে চাই, কী পরতে,
কখন খেলতে চাই, ফেলতে চাই,
মেলতে চাই হৃদয়,
আমি বোঝার আগেই বুঝতে
তুমি।
সব দিতে হাতের কাছে, পায়ের
কাছে, মুখের কাছে।
থাকতে নেপথ্যে।
তোমাকে চোখের আড়ালে রেখে, মনের আড়ালে রেখে
যত সুখ আছে সব নিয়েছি নিজের
জন্য।
তোমাকে দেয়নি কিছু কেউ, ভালবাসেনি,
আমিও দিইনি, বাসিনি।
তুমি ছিলে নেপথ্যের মানুষ।
তুমি কি মানুষ ছিলে?
মানুষ বলে তো ভাবিনি কোনোদিন,
দাসী ছিলে, দাসীর মত সুখের যোগান দিতে।
যাদুকরের মত হাতের কাছে, পায়ের কাছে,
মুখের কাছে যা কিছু চাই দিতে, না চাইতেই দিতে।
একটি মিষ্টি হাসিও তুমি পাওনি বিনিময়ে,
ছিলে নেপথ্যে, ছিলে জাঁকালো উৎসবের বাইরে
নিমগাছতলে অন্ধকারে, একা।
তুমি কি মানুষ ছিলে !
তুমি ছিলে সংসারের খুঁটি,
দাবার ঘুঁটি, মানুষ ছিলে না।
তুমি ফুঁকনি ফোঁকা মেয়ে,
ধোঁয়ার আড়ালে ছিলে,
তোমার বেদনার ভার একাই বইতে তুমি,
তোমার কষ্টে তুমি একাই কেঁদেছো।
কেউ ছিল না তোমাকে স্পর্শ করার, আমিও না।
যাদুকরের মত সারিয়ে তুলতে অন্যেরঅসুখ-বিসুখ,
তোমার নিজের অসুখ সারায়নি কেউ,
আমি তো নইই, বরং তোমাকে,
তুমি বোঝার আগেই হত্যা করেছি।

তুমি নেই, হঠাৎ আমি হাড়ে-
মাংসে-মজ্জায় টের পাচ্ছি তুমি নেই।
যখন ছিলে, বুঝিনি ছিলে।
যখন ছিলে, কেমন ছিলে জানতে চাইনি।
তোমার না থাকার বিশাল পাথরের তলে চাপা পড়ে আছে আমার দম্ভ।
যে কষ্ট তোমাকে দিয়েছি,
সে কষ্ট আমাকেও চেয়েছি দিতে, পারিনি।
কি করে পারব বল!
আমি তো তোমার মত অত নিঃস্বার্থ নই,
আমি তো তোমার মত অত বড় মানুষ নই।

No comments:

Post a Comment