পুষ্টির ঘাটতি
কেয়া পাল
ভারতের জনসংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার মানচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। চীনের পরই ভারতের স্থান। কিন্তু পুষ্টির গুরুত্বের দিক থেকে আমাদের দেশ সারা পৃথিবীর মধ্যেই পিছিয়ে রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হয়েও এদেশের সব মানুষ দু’বেলা পেট ভরে খেতে পায় না। অপুষ্টি তাই এদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের নিত্যসঙ্গী। এই অপুষ্টির পেছনে রয়েছে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, পুষ্টিশিক্ষার অভাব প্রভৃতি কারণসমূহ। ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (আই সি এম আর) পুষ্টি বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছে। আই সি এম আর-র বিভিন্ন ধরনের গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, ভারতীয় মহিলারা পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে বিভিন্ন ধরনের রোগের শিকার হয়ে দীর্ঘদিন ভুগেছেন এবং অনেকেই অপুষ্টির কারণে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আই সি এম আর-র পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ভারতে মোট মৃত্যু সংখ্যার ৪০% হলো শিশু, যাদের বয়স মূলত ৬বছরের মধ্যে। অথচ একটি উন্নত দেশে এই জাতীয় শিশু মৃত্যুর হার মাত্র ৪%।
আই সি এম আর-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভারতীয়দের খাদ্যে ক্যালোরির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম।
জাতীয় পুষ্টি মনিটরিং ব্যুরো (এন এন বি এন) যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে দেখা গেছে বর্তমানে ভারতের জনগণের ৫০% পরিবার যে ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে তাতে প্রোটিন, শক্তি উভয়েরই যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এক্ষেত্রে মানুষের দারিদ্র্যের সঙ্গে পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞানের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা যায়।
ভারতীয়দের মধ্যে ক্যালোরি এবং প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভিটামিন এ’, ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’, লৌহ, প্রভৃতি। সমীক্ষায় জানা গেছে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বহু মানুষ, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা ‘ভিটামিন এ’ জনিত অপুষ্টির কারণে দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে। আজও লক্ষ লক্ষ মহিলা চোখের রোগে ভুগছেন। লৌহের অভাবে গর্ভবতী নারী, প্রসূতি নারী এবং শিশুরা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোগের শিকার হচ্ছে। ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’-র অভাবে মহিলা ও শিশুরা গ্লোসাইটিস, চিলোসিস প্রভৃতি রোগে কষ্ট পাচ্ছেন।
ভারতের প্রতিটি নাগরিক (মহিলা ও শিশু) কী জাতীয় খাদ্য কত পরিমাণ গ্রহণ করে তাতে কী পরিমাণ পুষ্টিমূল্য তথা ক্যালোরি থাকে এসব নিয়ে দেশজুড়ে গবেষণামূলক সমীক্ষা চালিয়ে পুষ্টি বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান (এ আই এন) যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতীয় মহিলারা প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণ শস্যজাতীয় খাদ্যসামগ্রী গ্রহণ করেন। তাঁরা দৈনিক গ্রহণ করেন ৪৮৬গ্রাম শস্যজাতীয় খাদ্য। পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা দৈনিক এই জাতীয় খাদ্যগ্রহণ করেন ৪৩৫গ্রাম। মোট কথা ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে শস্য জাতীয় খাদ্যকণাই প্রধান খাবার হিসাবে গৃহীত। এইসব শস্য জাতীয় খাদ্যের মধ্যে থাকে চাল, গম, যব, জোয়ার, বাজরা এবং রাগি। সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ভারতীয় মহিলাদের মোট ক্যালোরি এবং প্রোটিনের সিংহভাগই (প্রায় ৮০%) আসে শস্যকণা থেকে।
ভারতীয় মহিলাদের প্রতিদিন মাথাপিছু ৭০গ্রাম ডাল গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু প্রতিদিন তাঁরা গড়ে ডাল গ্রহণ করেন মাত্র ৪১গ্রাম যা প্রয়োজনের তুলনায় ২৯গ্রাম করে কম। যদিও পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা দৈনিক ৪৭গ্রাম ডাল গ্রহণ করে। সারা ভারতের নিরিখে বিহার, মধ্য প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশের অধিবাসীরা তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ডাল গ্রহণ করেন। অন্যদিকে অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা, জম্মু-কাশ্মীর এবং তামিলনাডুর বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে কম ডাল খান।
আই সি এম আর-র সমীক্ষা থেকে জানা গেছে ভারতীয়দের ডাল এবং শস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণের অনুপাত ১:১২। কিন্তু এই অনুপাত হওয়া উচিত ১:৫, কেননা ডালের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং খাদ্যশস্যের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন একত্রে দেহে গৃহীত হলে তা মহিলাদের দেহ গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনে সাহায্য করে।
পুষ্টি বিষয়ক জাতীয় সমীক্ষা থেকে আরও জানা যায়, ভারতীয় মহিলাদের খাদ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল, ইত্যাদি ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, মহিলাদের শারীরিক গঠন, দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখা, কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এইসব খাদ্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। তবুও আর্থিক কারণে, কোথাও ধর্মীয় গোঁড়ামি, আবার কোথাও বা কুসংস্কারের ফলে এইসব খাবার তাঁদের খাদ্য তালিকায় থাকে না। রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং মধ্য প্রদেশের মানুষ ছাড়া অন্যান্য রাজ্যের মহিলা ও শিশুরা দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য তুলনামূলকভাবে কম গ্রহণ করেন।
ভারতবর্ষের উৎপাদনের ঘাটতি এবং বাজারে আমদানি না হওয়ার কারণেও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মহিলা ও শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে খান। তাছাড়া, ভারতীয় মহিলাদের খাদ্যে আর একটি বড় ঘাটতি হলো স্নেহ পদার্থ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার গড়ে দৈনিক স্নেহজাতীয় পদার্থের পরিমাণ হওয়া উচিত ৩৮গ্রাম। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্য করা যায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা দৈনিক ১৯গ্রাম স্নেহপদার্থ গ্রহণ করেন। এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। স্নেহপদার্থ যেহেতু ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে- র শোষণে সাহায্য করে, তাই স্নেহপদার্থের অভাবে এই সব ভিটামিন খাদ্যের মাধ্যমে দেহে গৃহীত হলেও তা মহিলাদের দেহের মধ্যে পুরোমাত্রায় শোষিত হয় না।
ওপরের বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণামূলক তথ্য থেকে বোঝা যায় ভারতীয় মহিলা ও শিশুদের মধ্যে পুষ্টিগত ঘাটতি একটি অন্যতম সমস্যা। পুষ্টির এই ঘাটতি মেটাতে না পারলে সামগ্রিকভাবে মহিলা ও শিশুদের শারীরিক বিকাশ সম্ভব নয়। একমাত্র সুষম আহারই পারে এই ঘাটতি মেটাতে।
আই সি এম আর-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভারতীয়দের খাদ্যে ক্যালোরির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই কম।
জাতীয় পুষ্টি মনিটরিং ব্যুরো (এন এন বি এন) যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতে দেখা গেছে বর্তমানে ভারতের জনগণের ৫০% পরিবার যে ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে তাতে প্রোটিন, শক্তি উভয়েরই যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এক্ষেত্রে মানুষের দারিদ্র্যের সঙ্গে পুষ্টি বিষয়ক জ্ঞানের অভাবও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা যায়।
ভারতীয়দের মধ্যে ক্যালোরি এবং প্রোটিন ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভিটামিন এ’, ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’, লৌহ, প্রভৃতি। সমীক্ষায় জানা গেছে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বহু মানুষ, বিশেষ করে মহিলা ও শিশুরা ‘ভিটামিন এ’ জনিত অপুষ্টির কারণে দৃষ্টিশক্তি হারাচ্ছে। আজও লক্ষ লক্ষ মহিলা চোখের রোগে ভুগছেন। লৌহের অভাবে গর্ভবতী নারী, প্রসূতি নারী এবং শিশুরা অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোগের শিকার হচ্ছে। ‘ভিটামিন বি কমপ্লেক্স’-র অভাবে মহিলা ও শিশুরা গ্লোসাইটিস, চিলোসিস প্রভৃতি রোগে কষ্ট পাচ্ছেন।
ভারতের প্রতিটি নাগরিক (মহিলা ও শিশু) কী জাতীয় খাদ্য কত পরিমাণ গ্রহণ করে তাতে কী পরিমাণ পুষ্টিমূল্য তথা ক্যালোরি থাকে এসব নিয়ে দেশজুড়ে গবেষণামূলক সমীক্ষা চালিয়ে পুষ্টি বিষয়ক জাতীয় প্রতিষ্ঠান (এ আই এন) যেসব তথ্য প্রকাশ করেছে তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতীয় মহিলারা প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণ শস্যজাতীয় খাদ্যসামগ্রী গ্রহণ করেন। তাঁরা দৈনিক গ্রহণ করেন ৪৮৬গ্রাম শস্যজাতীয় খাদ্য। পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা দৈনিক এই জাতীয় খাদ্যগ্রহণ করেন ৪৩৫গ্রাম। মোট কথা ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে শস্য জাতীয় খাদ্যকণাই প্রধান খাবার হিসাবে গৃহীত। এইসব শস্য জাতীয় খাদ্যের মধ্যে থাকে চাল, গম, যব, জোয়ার, বাজরা এবং রাগি। সমীক্ষা থেকে জানা যায় যে, ভারতীয় মহিলাদের মোট ক্যালোরি এবং প্রোটিনের সিংহভাগই (প্রায় ৮০%) আসে শস্যকণা থেকে।
ভারতীয় মহিলাদের প্রতিদিন মাথাপিছু ৭০গ্রাম ডাল গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু প্রতিদিন তাঁরা গড়ে ডাল গ্রহণ করেন মাত্র ৪১গ্রাম যা প্রয়োজনের তুলনায় ২৯গ্রাম করে কম। যদিও পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীদের ক্ষেত্রে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা দৈনিক ৪৭গ্রাম ডাল গ্রহণ করে। সারা ভারতের নিরিখে বিহার, মধ্য প্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশের অধিবাসীরা তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ডাল গ্রহণ করেন। অন্যদিকে অন্ধ্র প্রদেশ, কেরালা, জম্মু-কাশ্মীর এবং তামিলনাডুর বাসিন্দারা তুলনামূলকভাবে কম ডাল খান।
আই সি এম আর-র সমীক্ষা থেকে জানা গেছে ভারতীয়দের ডাল এবং শস্য জাতীয় খাদ্য গ্রহণের অনুপাত ১:১২। কিন্তু এই অনুপাত হওয়া উচিত ১:৫, কেননা ডালের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং খাদ্যশস্যের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর প্রোটিন একত্রে দেহে গৃহীত হলে তা মহিলাদের দেহ গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনে সাহায্য করে।
পুষ্টি বিষয়ক জাতীয় সমীক্ষা থেকে আরও জানা যায়, ভারতীয় মহিলাদের খাদ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ফল, ইত্যাদি ভিটামিন, খনিজ লবণ এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, মহিলাদের শারীরিক গঠন, দৈহিক সুস্থতা বজায় রাখা, কর্মক্ষমতা বজায় রাখার জন্য এইসব খাদ্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। তবুও আর্থিক কারণে, কোথাও ধর্মীয় গোঁড়ামি, আবার কোথাও বা কুসংস্কারের ফলে এইসব খাবার তাঁদের খাদ্য তালিকায় থাকে না। রাজস্থান, হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং মধ্য প্রদেশের মানুষ ছাড়া অন্যান্য রাজ্যের মহিলা ও শিশুরা দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্য তুলনামূলকভাবে কম গ্রহণ করেন।
ভারতবর্ষের উৎপাদনের ঘাটতি এবং বাজারে আমদানি না হওয়ার কারণেও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মহিলা ও শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে খান। তাছাড়া, ভারতীয় মহিলাদের খাদ্যে আর একটি বড় ঘাটতি হলো স্নেহ পদার্থ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার গড়ে দৈনিক স্নেহজাতীয় পদার্থের পরিমাণ হওয়া উচিত ৩৮গ্রাম। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ্য করা যায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা দৈনিক ১৯গ্রাম স্নেহপদার্থ গ্রহণ করেন। এটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। স্নেহপদার্থ যেহেতু ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে- র শোষণে সাহায্য করে, তাই স্নেহপদার্থের অভাবে এই সব ভিটামিন খাদ্যের মাধ্যমে দেহে গৃহীত হলেও তা মহিলাদের দেহের মধ্যে পুরোমাত্রায় শোষিত হয় না।
ওপরের বিভিন্ন সমীক্ষা ও গবেষণামূলক তথ্য থেকে বোঝা যায় ভারতীয় মহিলা ও শিশুদের মধ্যে পুষ্টিগত ঘাটতি একটি অন্যতম সমস্যা। পুষ্টির এই ঘাটতি মেটাতে না পারলে সামগ্রিকভাবে মহিলা ও শিশুদের শারীরিক বিকাশ সম্ভব নয়। একমাত্র সুষম আহারই পারে এই ঘাটতি মেটাতে।
No comments:
Post a Comment